Monday, February 28, 2011

পুঁজিবাজারে ঋণের পরিমাণ ৭৬৩০ কোটি টাকা

মাত্র চার মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিশেষ করে ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে নিজস্ব পোর্টফোলিওতো বটেই তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে গ্রাহকদের দেয়া ঋণের পরিমাণও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছর অতি মূল্যায়িত বাজারে ঋণ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলেও বর্তমানে শেয়ারের দর নাগালের মধ্যে আসার পরও বিনিয়োগ না বাড়ানোয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুঁজিবাজারে ঋণ বাবদ বিনিয়োগের পরিমাণ কমে আসার পেছনে কয়েকটি বিষয় চি্ি#৮২০৬;হ্নত করা হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পৃথকীকরণ, একক গ্রাহকদের ঋণ প্রদানে সীমাবদ্ধতা, শেয়ারের দরহ্রাস পাওয়ায় ফোর্স সেলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং সর্বোপরি পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা। 


জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক পৃথক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মূলধন কমে গেছে। যার কারণে পুঁজিবাজারে ঋণ বাবদ এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে বলে জানিয়েছে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর তাদের গ্রাহককে দেয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ছিল। কিন্তু মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানে এ ঋণের পরিমাণ অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজারে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর গ্রাহককে দেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে সর্বমোট ৭৬৩০ কোটি টাকা। এরমধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে ঋণ বাবদ বিনিয়োগ ৪৩৬৪ কোটি টাকা এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে ৩২৬৬ কোটি টাকা। গত চার মাস আগে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংকের গ্রাহককে ঋণ বাবদ বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। গত ২১ সেপ্টেম্বর মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি আরিফ খান শীর্ষ নিউজ ডটকমকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে সে সময়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ঋণের সঠিক পরিমাণ জানা না গেলেও ধারণা করা হয় এ পরিমাণ কোনোভাবেই ৬ হাজার কোটি টাকার কম ছিল না। তবে পুঁজিবাজারে সর্বমোট মার্জিন ঋণের সঠিক তথ্য কোনো সংস্থার কাছেই ছিল না। যদিও সমপ্রতি সিকিউরিটিজ এন্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ঋণের তথ্য সংগ্রহে তৎপর হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে ঋণ বাবদ বিনিয়োগ পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ হাস্যকরভাবে কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী পুঁজিবাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বেশি থাকলেও অজানা কারণে এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যমতে পুঁজিবাজারে ঋণ বাবদ বিনিয়োগের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ মাত্র ৪৬২ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারের অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে সরকারের অর্থমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায় থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সে ডাকে সাড়া দেয়নি। অপরদিকে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী পুঁজিবাজার থেকে মুনাফার একটি অংশ পুনঃ বিনিয়োগের বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় বাজার থেকে তুলে নেয়া অর্থ ফেরত আসার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। যার প্রভাবে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে।


বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণ বাবদ বিনিয়োগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক। পুঁজিবাজারে এ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ বাবদ বিনিয়োগ রয়েছে ৬৭১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে প্রাইম ব্যাংক ৫৯৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স ৪৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক ৪৯৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, আইসিবি ১৯১ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৩৬৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আইআইডিএফসি ৫৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ২৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংক ৯৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল সিকিউরিটিজ ৫০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, জনতা ক্যাপিটাল ১৪৭ কোটি ৫ লাখ টাকা, বে লিজিং ৯৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ইসি সিকিউরিটিজ ৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক ২১১ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ২৭৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, পিএলএফএসএল ১৩৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, এঙ্মি ব্যাংক ৪২ কোটি ১২ লাখ টাকা, আইডিএলসি ১০৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, পুঁজিবাজারে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট কত টাকা ঋণ রয়েছে সে বিষয়ে ডিএসইর কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে বর্তমানে যে ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে সেটি মোটামুটি স্পষ্ট। পুঁজিবাজারে ঋণের এ প্রবাহ কমে আসার জন্য তিনি ব্যাংকগুলোকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো গত ২ বছর পুঁজিবাজারে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে প্রচুর মুনাফা করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ তুলে নেয়ায় বাজারে তারল্য সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর এ আচরণ ঠিক হয়নি। শাকিল বলেন, ব্যাংকগুলোর আমানতকারীর অর্থের যেমন সুরক্ষা করতে হবে তেমনি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। অথচ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা না করেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের প্রাধান্য দিয়ে হঠাৎ করেই পুঁজি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এভাবে দ্রুত একবারে পুঁজি প্রত্যাহার না করে পর্যায়ক্রমে সহনীয় মাত্রায় প্রত্যাহার করলে আজ পুঁজিবাজারের এ অবস্থা তৈরি হতো না।

No comments:

Post a Comment